আজ শুক্রবার, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আলোচিত প্রবীর হত্যা মামলায় পিন্টুর ফাঁসি

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

নারায়ণগঞ্জের টানবাজারের আলোচিত প্রবীর হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে প্রবীর হত্যা মামলার প্রধান আসামী পিন্টু দেবনাথ কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দন্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছে আদালত।

ছাড়া তার দোকানের কর্মচারী বাপন ভৌমিককে ৭ বছারের সশ্রম কারাদন্ড সেই সঙ্গে আরও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে। অর্থদন্ডের টাকা আদায় করে নিহতের পরিবারকে প্রদান করতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

২৯ মে বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমান আসামীদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। এই মামলায় খালাস পেয়েছেন প্ররোচনার অভিযোগে অভিযুক্ত আমলাপাড়া এলাকার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এর আগে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ হত্যা মামলার চার্জশীট (অভিযোগপত্র) আদালতে দাখিল করা হয়। প্রবীর চন্দ্র ঘোষ হত্যায় ২০৩ পাতার চার্জশীট আদালতে দাখিল করা হয়।

অভিযুক্তরা হলো কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানার চন্দনপুর গ্রামের মৃত সতীশ দেবনাথের পুত্র বর্তমানে আমলাপাড়া কেসি নাগ রোডের ঠান্ডু মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিন্টু দেবনাথ (৪১), তার সহযোগী কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার ঠেটালিয়া গ্রামের কুমদ ভৌমিকের পুত্র বাপন ভৌমিক ওরফে বাবু (২৭) ও আমলাপাড়া কেবি সাহা রোডের মৃত হাজী মহসিন মোল্লার পুত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন মোল্লা (৫১)। দুই মামলাতেই আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্ররোচনাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

 প্রবীর হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায় , ২০১৮ সালের ১৮ জুন রাতে নিখোঁজ হয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ। পরে গত ৯ জুলাই সড়কে শহরের কালীরবাজার এলাকা থেকে পিন্টু দেবনাথ ও বাপন ভৌমিক বাবুকে গ্রেফতার করে ডিবি। তাদের দেয়া তথ্য মতে রাতেই শহরের আমলাপাড়া এলাকার রাশেদুল ইসলাম ঠান্ডু মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রবীর ঘোষের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

জবানবন্দীতে পিন্টু বলেন, ঈদ উপলক্ষে শান্ত পরিবেশ থাকা প্রবীর চন্দ্র ঘোষকে ১৮ জুন রাতে বিয়ার পানের পার্টির কথা বলে তার বাসা থেকে বের করি। পরে আমার ফ্ল্যাট বাসায় নিয়ে বসাই। সেখানে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে থাকি একত্রে। ওই সময়ে আগে নেওয়া স্প্রাইট পান করে প্রবীর। খেয়েছিল বিস্কুটও। খাওয়ার সময়েই আমি তাকে পিছন থেকে আগে থেকে কেনা চাপাতি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করি। তখন প্রবীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় প্রবীর আমাকে কয়েকদফা লাথি মারতে থাকলে ওরে আবারো লাঠি ও দা দিয়ে আঘাত করতে থাকি। এ সময় প্রবীর রক্তাক্ত অবস্থায় টিভি রুমের খাটে লুটে পড়ে। শরীর ঢেকে দেওয়া হয় বালিশ ও চাদর দিয়ে। পরে ধারালো চাপাতি দিয়ে তার দেহ’কে ৭ টুকরো করা হয়। মাথা, দুই হাত, দুই পা, বডি, পেট ও পাজর ৭টি খন্ড করে বাজার থেকে ক্রয়কৃত ৭টি নতুন আকিজ সিমেন্টের ব্যাগের মধ্যে ৪টিতে টুকরো টুকরো লাশ ভরি। আরেক ব্যাগে বালিশ, খাটের চাদর, ব্যবহার করা জামা ও দা প্যাকেট করি। পরে ঘরের বাথরুমে রক্তাক্ত ও নিজে গোসল করি। পরিবেশ শান্ত অবস্থায় আনুমানিক সাড়ে ১২টায় বাসা নিচে পরিত্যক্ত সেফটি ট্যাংকটিতে ৩ ব্যাগে থাকা ৫ টুকরো ঢুকাতে শুরু করি। আরেকটি ব্যাগ বাড়ির উত্তর পাশে ময়লাস্তূপে সাথে ড্রেনে মাথায় ফেলে দেই। কাজ শেষ করে বাসায় হাত পরিস্কার করে ফের প্রবীর চন্দ্র ঘোষের বাড়িতে রাত দেড়টার দিকে ছুটে যাই। রাতেই শীতলক্ষ্যা নদীতে এসে ফেলে দেই চাপাতি, বিছানার চাদর আর বালিশ। ডিবির রিমান্ডে পিন্টু আরো জানায়, প্রবীরের টাকায় ক্রয়কৃত স্বর্ণ ভবনের দোকান, বন্ধকী টাকা আত্মসাত ও ভয়ভীতি কারণে প্রবীরকে হত্যা করে।

এদিকে প্রবীর হত্যা মামলা টি দ্রুত নিষ্পতি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করছে নিহতের পরিবার ও নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ। এখন রায় কার্যকরের পালা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ